কাকরোল (Spiny Gourd)



কাকরোল (Spiny Gourd)

কাকরোল (Spiny Gourd) একটি পুষ্টিকর সবজি যা বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়। নিচে কাকরোলের পরিচয়, ব্যবহার, উপকারিতা, অপকারিতা ও চাষাবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:

পরিচয়:

বাংলা নাম: কাকরোল 

ইংরেজি নাম: Spiny Gourd/Teasel Gourd/Bitter Gourd/Bitter Melon

বৈজ্ঞানিক নাম: Momordica dioica 

পরিবার: Cucurbitaceae

এটি দেখতে ছোট ও কাঁটাযুক্ত, সবুজ রঙের হয়। কাকরোল সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে পাওয়া যায়।

ৎপত্তি:

কাকরোলের উৎপত্তি দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে। এটি প্রাচীনকাল থেকে চাষ করা হচ্ছে এবং এর ব্যবহার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রচলিত। কাকরোলের গাছ সাধারণত উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এটি একটি লতানো উদ্ভিদ, যা সাধারণত ঝোপঝাড় বা বেড়ার ধারে জন্মাতে দেখা যায়। 

জাত:

কাকরোলের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত রয়েছে, কিছু জনপ্রিয় জাত হলো:

১. সবুজ কাকরোল: এটি সাধারণত সবুজ রঙের এবং তীব্র তিক্ত স্বাদের হয়। এটি রান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

২. হালকা সবুজ কাকরোল: এই জাতের কাকরোলের রঙ হালকা সবুজ এবং স্বাদ তুলনামূলকভাবে কম তিক্ত।

৩. লম্বা কাকরোল: এই জাতের কাকরোল লম্বা এবং পাতলা হয়, যা সাধারণত স্যালা 

এছাড়াও আছে,আসামি, মণিপুরী, মুকুন্দপুরী, মধুপুরী। 

পুষ্টিগুণ:

কাকরোল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে:

১. ভিটামিন ও মিনারেল: কাকরোলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লুটেইন ও জিয়াজেন্থিন থাকে এ ছাড়াও রয়েছে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন বি, শ্বেতসার, খনিজ পদার্থ

২. কম ক্যালোরি: কাকরোল কম ক্যালোরি যুক্ত, তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: কাকরোলের তিক্ত স্বাদ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৪. ফাইবার: হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কাকরোলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

৬.ত্বকের জন্য উপকারী: কাকরোলের রস ত্বকের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের সমস্যা যেমন অ্যাকনে এবং ব্রণের চিকিৎসায় সাহায্য করে।


ব্যবহার:

১. তরকারি: ভাজি, ভর্তা, বা ডাল-সবজির সঙ্গে রান্না করা হয়।

২. ভাজা: সরাসরি ভেজে খাওয়া যায়।

৩. আচার: অনেকে কাকরোল দিয়ে আচার তৈরি করেন।

 উপকারিতা:

১.হজমে সহায়তা: এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি, যা হজমে সহায়ক এবং পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

২. রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

৩. শক্তিবর্ধক: আয়রন ও ভিটামিন-সি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

৪. ত্বকের জন্য ভালো: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

 অপকারিতা:

১. অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।

২. অতিরিক্ত ভাজা অবস্থায় খেলে তেলে ভাজা খাবারের মতো ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. অপরিচ্ছন্নভাবে রান্না করলে পেটের সমস্যা হতে পারে।

চাষাবাদ:

কাকরোলের চাষাবাদ একটি সহজ প্রক্রিয়া। নিচে এর কিছু ধাপ উল্লেখ করা হলো:

১. মাটি নির্বাচন: কাকরোলের জন্য দোআঁশ বা বেলে মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটির pH ৬.০ থেকে ৭.০ হওয়া উচিত।

২. বীজ বপন: কাকরোলের বীজ সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বপন করা হয়। বীজগুলো ১-২ সেন্টিমিটার গভীরে এবং ৩০-৪৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে বপন করতে হবে।

৩. পানি দেওয়া: কাকরোলের জন্য নিয়মিত জল দেওয়া প্রয়োজন, তবে জলাবদ্ধতা এড়াতে হবে।

৪. সার প্রয়োগ: কাকরোলের জন্য কম্পোস্ট বা পচা সার ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৫. নির্মলতা: কাকরোলের চারপাশে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে গাছগুলো পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়।

৬. ফসল তোলা: কাকরোল সাধারণত ৫০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেয়। যখন কাকরোল পাকা হয় এবং সবুজ রঙ ধারণ করে, তখন তা তোলা হয়।

Next Post Previous Post

SVG Icons