কলা(Banana)


কলা(BANANA)


পরিচয়: 

কলা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল। যার বৈজ্ঞানিক নাম: Musa acuminate.এটি একটি বৃহৎ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যার কান্ডটি মাংসল এবং পাতাগুলি বেশ বড় হয়। কলা সাধারণত মিষ্টি স্বাদের এবং এটি সারা বিশ্বে একটি প্রিয় ফল হিসেবে পরিচিত। তবে ঔষধি গুণের কারণেও ব্যবহৃত হয়। 

 

উৎপত্তি:

কলা চাষের ইতিহাস প্রায় ৭০০০ বছর পুরনো। বর্তমানে, কলা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হয়, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে।চাষাবাদকলার চাষ সাধারণত উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া পছন্দ করে। এটি ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। কলার গাছ সাধারণত ২-৩ মিটার উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় 

কলার উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ থাকলেও ধারণা করা হয়, এটি নিউ গিনি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে প্রথম উদ্ভূত হয়। বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকেই কলার চাষ হচ্ছে। এটি পরে আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ে। 

 

খাওয়ার প্রক্রিয়া: 

কলা খেতে খুবই সহজ। পাকা কলার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের অংশ খাওয়া হয়। কাঁচা কলা রান্না করে খাওয়া যায়। কলা দিয়ে চিপস, পায়েস, হালুয়া, স্ন্যাকস, শেক ইত্যাদিও তৈরি করা যায়।   

 

কলার জাতের প্রকারভেদ:

বিভিন্ন জাতের কলা রয়েছে, যেমন -বারি কলা-১, বারি কলা-২, বারি কলা-৩, বারি কলা-৪, অমৃতসাগর, মেহেরসাগর, চম্পা, চিনি চম্পা, সবরি, কবরি, ইত্যাদি। 

নতুন জাতের মধ্যে জি-নাইন কলা অন্যতম যা উচ্চ ফলনশীল। 

 

উপকারিতা:


 

কলায় থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা মেজাজ ভালো রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।

কলা দ্রুত শক্তি প্রদান করে, তাই এটি ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি আদর্শ খাবার।

কলা শক্তি বাড়ায়, কারণ এতে কার্বোহাইড্রেট ও প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ) থাকে।

পটাশিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 

কলা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী। 

কলা খেলে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম বজায় থাকে, যা হাড় মজবুত রাখে। 

 

অপকারিতা:  

সাধারণত কলার তেমন কোনো অপকারিতা নেই, তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত: 

যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অতিরিক্ত কলা খাওয়া উচিত না, কারণ এতে শর্করার পরিমাণ বেশি।

অতিরিক্ত কলা খেলে ওজন বাড়তে পারে। 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি কলা খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। 

পাকা কলা বেশি খেলে গ্যাস বা বদহজম হতে পারে।

 

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। সারা বছরই এর চাহিদা থাকে এবং এটি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য একটি লাভজনক ফসলকলা প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বাজার ছাড়াও কলা রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।কলা গাছের পাতা, থোড় ও কাঁচা ফল সব কিছুই ব্যবহৃত হয়, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

 

চাষাবাদ:

জমি ও মাটি: কলা চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। এটি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়, তবে শীতকালে এর ফলন কিছুটা কম হয়কলার জন্য সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। 

চারা রোপণ: চারা বা কন্দ রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মার্চ থেকে জুন। প্রতি গাছে পর্যাপ্ত রোদ ও পানি লাগবে। 

সার ও সেচ: গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত। 

পরিচর্যা: আগাছা পরিষ্কার, গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়া এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। 

ফল সংগ্রহ: কলা রোপণের ৯-১২ মাসের মধ্যে থোড় বের হয় এবং পরে ফল পাকে। ফল পরিপক্ক হলে কেটে বাজারজাত করা হয়।  

Next Post Previous Post

SVG Icons