তরমুজ(Watermelon)



তরমুজ(Watermelon)









তরমুজের পরিচয়: 

তরমুজ, যা ইংরেজিতে "Watermelon" নামে পরিচিত, তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus lanatus এবং এটি Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তরমুজের বাইরের খোসা সবুজ রঙের ও শক্ত হয়, আর ভিতরের অংশ লালচে রঙের ও রসালো, এতে ছোট ছোট কালো বীজ থাকে।তরমুজের রসালো এবং মিষ্টি স্বাদ, পাশাপাশি এর উচ্চ পানিবাহী উপাদান, এটি গ্রীষ্মের তাপ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি গরমের দিনে মানুষের দেহে পানির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তরমুজের উৎপত্তি:

 তরমুজের উৎপত্তি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে।প্রাচীনকালে মিশরীয়রা তরমুজ চাষ করত এবং এটি পিরামিডে মৃতদের সাথে কবরেও রাখা হতো।ইতিহাসবিদদের মতে, তরমুজের প্রথম চাষ শুরু হয়েছিল প্রায় ৫০০০ বছর আগে। পরবর্তীতে এটি ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকায় বিস্তার লাভ করে।

তরমুজের প্রকারভেদ:

১. সুলভ জাত

২. হলুদ তরমুজ

৩. সিডলেস তরমুজ

৪. ক্রিমসন সুপার তরমুজ

.পিকনিক তরমুজ(ছোট)

৬. রেড-সিডেড তরমুজ

৭. হাইব্রিড জাত 

নাম

বিবরণ

১. সুলভ জাত

ছোট আকারের, গাঢ় সবুজ খোসা ও লাল মিষ্টি শাঁস।   মাঝারি আকারের, পাতলা ডোরা কাটা সবুজ খোসা, খুবই মিষ্টি। 

বড় আকারের, হালকা সবুজ গায়ে গাঢ় ডোরা, দীর্ঘাকার। 

ধূসর-সবুজ খোসা, লম্বাটে আকার। 

 

২. হলুদ তরমুজ

ভেতরের শাঁস হলুদ বা কমলা রঙের হয়। 

স্বাদে মিষ্টি ও কিছুটা টক-মিষ্টিও হতে পারে।

 

৩. সিডলেস তরমুজ

খেতে সহজ, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য সুবিধাজনক। 

হালকা মিষ্টি স্বাদ এবং বীজের ঝামেলা নেই।

 

৪. ক্রিমসন সুপার তরমুজ

মিষ্টি এবং রসালো। এর বাইরের খোসা গা সবুজ এবং ভিতরের অংশ গা লাল।ব আকারের হ এবং এর স্বাদ খুবই সুস্বাদু।

.পিকনিক তরমুজ(ছোট)

৫. পিকনিক তরমুজ

পিকনিক তরমুজ সাধারণত ছোট আকারের হ এবং এটি সহজে বহনযোগ্য। এটি সাধারণত গ্রীষ্মের পিকনিক বা পার্টির জন্য উপযুক্ত।

৬. রেড-সিডেড তরমুজ

৬. রেড-সিডেড তরমুজ

এই প্রকারভেদে সাধারণত ব এবং গা লাল বীজ থাকে। এটি সাধারণত মিষ্টি এবং রসালো হ, এবং এর স্বাদ খুবই ভালো।

৭. হাইব্রিড জাত 

উন্নত জাতের বীজ থেকে উৎপাদিত। 

ফলন বেশি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি।

 


প্রতিটি জাতের তরমুজ নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য উপযোগী ও নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

তরমুজের খাওয়ার প্রক্রিয়া: 

তরমুজ সাধারণত পাকা অবস্থায় খাওয়া হয়খোসা ফেলে তার ভিতরের লাল অংশ ছোট টুকরো করে কেটে খাওয়া হয়অনেক সময় ফ্রিজে ঠাণ্ডা করে, জুস হিসেবেও খাওয়া হয়,যা গ্রীষ্মের জন্য একটি Refreshing পানীয়বীজ সরিয়ে ফেলা যেতে পারে, আবার অনেকে তা আলাদা করে ভেজে খায়

তরমুজের উপকারিতা:




১. পানিবাহী উপাদান: তরমুজের% শর্করা, ৯২%পানি অন্যান্য উপাদান ২%থাকে,যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মের তাপের মধ্যে এটি অত্যন্ত উপকারী।

২. পুষ্টিগুণ: তরমুজ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৩. ত্বক ও চুলের জন্য ভালো: ভিটামিন A C ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখে। 

৪. হজমে সহায়ক: এতে থাকা ফাইবার ও পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ: তরমুজ কম ক্যালোরি এবং উচ্চ জলবাহী উপাদানযুক্ত, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৬.হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী: এতে থাকা লাইসোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

তরমুজে পুষ্টি উপাদান:

১০০ গ্রাম তরমুজে পুষ্টি উপাদান (প্রায়):

শক্তি (Energy): ৩০ কিলোক্যালরি  

পানি: ৯১.৫%  

কার্বোহাইড্রেট: ৭.৬ গ্রাম  

চিনি (Sugar): ৬.২ গ্রাম  

আঁশ (Fiber): ০.৪ গ্রাম  

প্রোটিন: ০.৬ গ্রাম  

চর্বি (Fat): ০.২ গ্রাম  

ভিটামিন C: ৮.১ মি.গ্রা.  

ভিটামিন A (বেটা ক্যারোটিন): ২৮৫ মাইক্রোগ্রাম  

ভিটামিন B1 (থায়ামিন): ০.০৩৭ মি.গ্রা.  

ভিটামিন B6: ০.০৪৫ মি.গ্রা.  

পটাশিয়াম: ১১২ মি.গ্রা.  

ম্যাগনেশিয়াম: ১০ মি.গ্রা.  

ক্যালসিয়াম: ৭ মি.গ্রা.  

লোহা: ০.২৪ মি.গ্রা.

তরমুজের উপকারিতা:

তরমুজ শরীরকে হাইড্রেট রাখে, কিডনির জন্য ভালো, ত্বক ও চোখের জন্য উপকারী এবং হালকা খাবার হিসেবে গরমকালে খুবই উপযোগী।

তরমুজের অপকারিতা:  

১. অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। 

২. ডাইয়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে শর্করার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। 

৩. ঠাণ্ডা অবস্থায় বেশি খেলে গলা ব্যথা হতে পারে।

 

তরমুজের  অর্থনৈতিক গুরুত্ব: 

তরমুজ বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন। এটি একটি লাভজনক মৌসুমি ফসল।দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে চরাঞ্চল, বরিশাল, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও যশোরে তরমুজের চাষ ব্যাপকভাবে হচ্ছে। এটি কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছে। বাজারে উচ্চ চাহিদা রয়েছে এবং গ্রীষ্মকালে বিক্রি হয়রপ্তানির ক্ষেত্রেও তরমুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল।

তরমুজের  চাষাবাদ: 





তরমুজ সাধারণত বেলে ও দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। পর্যাপ্ত রোদ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হয়এটি উষ্ণ আবহাওয়া পছন্দ করে এবং সাধারণত ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়

বীজ বপন: ফাল্গুন-চৈত্র (মার্চ থেকে মে) মাসে বপন করা হয়। 

সার ব্যবহার: গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ও পটাশ প্রয়োগে ফলন ভালো হয়। 

সেচ: প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হয়, বিশেষ করে ফুল ও ফল গঠনের সময়। 

ফল সংগ্রহ: সাধারণত বপনের ৮০-৯০ দিনের মধ্যে তরমুজ পাকা যায়খোসা শক্ত ও পিঠের দিক হালকা হলুদ রঙ ধারণ করলে তা তোলার উপযুক্ত হয়

 উপসংহার: 

তরমুজ শুধু একটি সুস্বাদু ও রসালো ফলই নয়, এটি স্বাস্থ্য উপকারী ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল।তরমুজ একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফল যা গ্রীষ্মের তাপ থেকে রক্ষা করে। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব কৃষকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল করে তোলে।সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এটি দেশের কৃষিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শসা(Cucumber)

কাকরোল (Spiny Gourd)

টমেটো(Tomato)