ডাটা শাক(Stem Spinach)

ডাটা শাক(Stem Spinach) 

ডাটা শাক, যা ইংরেজিতে Stem Spinach নামে পরিচিত, একটি পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় শাকসবজি।এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো "Spinacia oleracea." এটি সাধারণত সবুজ পাতা এবং মসৃণ পৃষ্ঠের জন্য পরিচিত।

ডাটা শাক বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয় এবং এটি স্বাস্থ্যকর খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এটি খাদ্য হিসেবে বহুল ব্যবহৃত।

উৎপত্তি:

ডাটা শাকের নির্দিষ্ট কোনো উৎপত্তি বিষয়ক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া কঠিন, তবে এটি ভারতীয় উপমহাদেশে বহুকাল ধরে একটি জনপ্রিয় সবজি। শাক শব্দটি বহু পুরোনো এবং ভারতে বিভিন্ন ধরনের শাক ব্যবহারের ঐতিহ্যও দীর্ঘদিনের। ডাটা শাক মূলত গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং এটি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়।এটি হাজার হাজার বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এর ব্যবহার রয়েছে।ডাটা শাকের চাষের ইতিহাস প্রায় ৮,০০০ বছর আগে শুরু হয়।

ব্যবহার:  

১. রান্না: ডাটা শাক তরকারি, স্যুপ, এবং ডাল রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এটি ভাজা বা সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়।

২. সালাদ: তাজা ডাটা শাক সালাদে যোগ করা হয়, যা পুষ্টি এবং স্বাদ বাড়ায়।

৩. মিষ্টান্ন: কিছু দেশে ডাটা শাক দিয়ে পায়েস বা পুডিং তৈরি করা হয়।

ডাটা শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:

১. পুষ্টি: ডাটা শাক ভিটামিন A, C, K, এবং ফোলেটের ভালো উৎস। এটি আয়রন এবং ক্যালসিয়ামেও সমৃদ্ধ।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ডাটা শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মৌসুমী অসুস্থতা যেমন সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সহায়ক।

৩. হজমে সহায়তা: ডাটা শাকের ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

৪. হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো: এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৫.রক্তশূন্যতা দূর করে: এই শাকে থাকা আয়রন লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ডাটা শাকে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি পেট ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে।

৭. হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা: এই শাকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে, যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

৮. চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: ডাটা শাকে থাকা ভিটামিন এ ও বিটা-ক্যারোটিন চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং রাতকানা প্রতিরোধে সহায়ক।

৯. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ডাটা শাকে থাকা খনিজ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

১০. ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে: ভিটামিন সি ও ফোলিক অ্যাসিড ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

ডাটা শাকের অপকারিতা:

১.কিডনি সমস্যায় সতর্কতা: ডাটা শাকে অক্সালেট নামক যৌগ থাকে, যা কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কিডনি সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের এটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

২. অ্যালার্জি: কিছু মানুষের ডাটা শাকের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা খাওয়ার পর অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

৩. অতিরিক্ত খাওয়ায় পেটের সমস্যা: অতিরিক্ত ডাটা শাক খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে। 4. গর্ভাবস্থায় সতর্কতা: গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত ডাটা শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি মাথা ঘোরা বা মেজাজ পরিবর্তনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 চাষ পদ্ধতি ও জাত:

ডাটা শাকের চাষ শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল উভয় মৌসুমে করা যায়।

বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু জাত হলো:

পান্না, রেড টাওয়ার, গ্রীন টাইয়ার: সারা বছর চাষযোগ্য জাত।

বারি ডাঁটা-১: বপনের ৪০-৪৫ দিন পর খাওয়ার উপযোগী হয়।

বারি ডাঁটা-২: বপনের ২৫ দিন পর খাওয়ার উপযোগী হয়।

Next Post Previous Post

SVG Icons