লেটুস পাতা(Lettuce)
লেটুস পাতা(Lettuce)
লেটুস পাতার পরিচয় ও উৎপত্তি
বাংলা নাম: লেটুস পাতা

ইংরেজি নাম:
Lettuce
বৈজ্ঞানিক নাম:
Lactuca sativa
লেটুস পাতার উৎপত্তি
লেটুসের উৎপত্তি প্রাচীন মিশরে, যেখানে এটি প্রথমে একটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরে এটি গ্রীক এবং রোমান সভ্যতায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে, লেটুস বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চাষ করা হয় এবং এটি বিভিন্ন প্রকারে পাওয়া যায়, যেমন রোমান লেটুস, আইসবার্গ, এবং গ্রিন লেটুস।
লেটুস পাতার জাত
১. বাটারহেড লেটুস (Butterhead Lettuce)
এই জাতের লেটুসের পাতা মসৃণ এবং নরম হয়। এর স্বাদ মিষ্টি
এবং এটি স্যালাডে খুব জনপ্রিয়।
২. রোমেন লেটুস (Romaine Lettuce)
রোমেন লেটুসের পাতা লম্বা এবং শক্ত হয়। এটি স্যালাড এবং
স্যান্ডউইচে ব্যবহৃত হয় এবং এর স্বাদ তুলনামূলকভাবে তাজা।
৩. আইসবার্গ লেটুস (Iceberg Lettuce)
আইসবার্গ লেটুসের পাতা খাস্তা এবং সাদা রঙের হয়। এটি স্যালাডে এবং
স্যান্ডউইচে ব্যবহৃত হয় এবং এর স্বাদ হালকা।
৪. লাল লেটুস (Red Lettuce)
এই জাতের লেটুসের পাতা লাল রঙের এবং এটি স্যালাডে একটি সুন্দর রঙ যোগ করে। এর স্বাদও মিষ্টি।
৫. ফ্রিজ লেটুস (Frisée Lettuce)
ফ্রিজ লেটুসের পাতা কোঁকড়ানো এবং খাস্তা হয়। এটি স্যালাডে একটি বিশেষ
টেক্সচার যোগ করে।
৬. মিজুনা (Mizuna)
মিজুনা
একটি জাপানি জাতের লেটুস,
যার পাতা সূক্ষ্ম এবং তাজা স্বাদের হয়। এটি স্যালাড এবং রান্নায় ব্যবহৃত হয়।
প্রত্যেক জাতের নিজস্ব আবহাওয়াগত ও মাটির উপযোগিতা রয়েছে।
বাংলাদেশে সাধারণত লিফ লেটুস ও বাটারহেড লেটুস বেশি চাষ হয়।
লেটুস পাতার ব্যবহার
১. সালাদ: লেটুস
পাতা সবচেয়ে বেশি সালাদে ব্যবহৃত হয়। এটি তাজা এবং খেতে খুবই সুস্বাদু।
২. স্যান্ডউইচ:
স্যান্ডউইচে লেটুস পাতা ব্যবহার করা হয়, যা খাওয়ার স্বাদ বাড়ায়।
৩. রান্না: কিছু
রান্নায়লেটুস পাতা ব্যবহার করা হয়, যদিও এটি সাধারণত তাজা খাওয়া হয়।
৪. গার্নিশ: লেটুস পাতা বিভিন্ন খাবারের গার্নিশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
১০০ গ্রাম লেটুস পাতার পুষ্টি উপাদান

১০০ গ্রাম লেটুস পাতায় সাধারণত যে পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে, তা নিচে দেওয়া হলো:
শক্তি (Energy): ১৫ কিলোক্যালোরি
পানি(Water): ৯৫–৯৬ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট(Carbohydrate): ২.৯ গ্রাম
প্রোটিন(Protein): ১.৪ গ্রাম
চর্বি (Fat): ০.১৫ গ্রাম
ফাইবার(Fiber): ১.৩ গ্রাম
ভিটামিন A: ৭৪০৫ IU (খুব বেশি, চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী)
ভিটামিন K: ১২৬.৩ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন C: ৯.২ মি.গ্রা.
ফোলেট (Folate): ৩৮ মাইক্রোগ্রাম
ক্যালসিয়াম(Calcium): ৩৬ মি.গ্রা.
আয়রন(Iron): ০.৯ মি.গ্রা.
পটাশিয়াম(Potasium): ১৯৪ মি.গ্রা.
ম্যাগনেশিয়াম(Magnesium): ১৩ মি.গ্রা.
লেটুস পাতা কম ক্যালোরি ও উচ্চ পানি ও ভিটামিনযুক্ত একটি সবজি, যা ডায়েট ও পেট পরিষ্কারে উপকারী।
লেটুস পাতার উপকারিতা

১. কম ক্যালোরি:
লেটুস পাতায় ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
২. ভিটামিন এবং
মিনারেল: এতে ভিটামিন A, ভিটামিন K, ভিটামিন C, এবং ফোলেট রয়েছে, যা শরীরের জন্য উপকারী।
৩. হাইড্রেশন:
লেটুস পাতায় প্রায়৯৫% পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
৪. হজমে সহায়তা:
লেটুস পাতায় ফাইবারের পরিমাণ বেশি, যা হজমে সহায়ক এবং পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৫. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট:
রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৬. ত্বকের জন্য ভালো: ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে।
লেটুস পাতার অপকারিতা
১. অ্যালার্জি:
কিছু মানুষের লেটুস পাতার প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা খাওয়ার পর অস্বস্তি সৃষ্টি
করতে পারে।
২. পুষ্টির অভাব:
লেটুস পাতায় কিছু পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকতে পারে, তাই একে একক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ
করা উচিত নয়।
৩. বিষাক্ততা:
কিছু ক্ষেত্রে, যদি লেটুস পাতা সঠিকভাবে ধোয়া না হয়, তবে এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা
পেস্টিসাইডের সংস্পর্শে আসতে পারে।
৪.ঠান্ডা: অতিরিক্ত খেলে ঠান্ডা লাগতে পারে।
লেটুস পাতার চাষাবাদ

লেটুসের চাষাবাদ
একটি সহজ প্রক্রিয়া। নিচে এর কিছু ধাপ উল্লেখ করা হলো:
১. মাটি নির্বাচন:
লেটুসের জন্য দোআঁশ বা বেলে মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটির pH ৬.০ থেকে ৭.০ হওয়া উচিত।
২. বীজ বপন: লেটুসের
বীজ সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বপন করা হয়। বীজগুলো ১-২ সেন্টিমিটার গভীরে
এবং ২০-২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে বপন করতে হবে।
৩. পানি দেওয়া:
লেটুসের জন্য নিয়মিত পানি দেওয়া প্রয়োজন, তবে জলাবদ্ধতা এড়াতে হবে।
৪. সার প্রয়োগ:
লেটুসের জন্য কম্পোস্ট বা পচা সার ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৫. আগাছা: লেটুসের
চারপাশে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে গাছগুলো পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়।
৬. ফসল তোলা:
লেটুস সাধারণত ৩০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেয়। যখন পাতা তাজা এবং সবুজ রঙ ধারণ করে, তখন তা তোলা হয়।
মন্তব্যসমূহ