আম(Mango)

পরিচয়:
বাংলা নাম: আম
ইংরেজি নাম: Mango
বৈজ্ঞানিক নাম: Mangifera indica
আম, যা "King of Fruits"অর্থাৎ“ফলের রাজা” নামে
পরিচিত, একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল।
উৎপত্তি ও বিকাশ:
আমের আদি উৎপত্তি ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অঞ্চলে। এটি
প্রাচীনকাল থেকে চাষ করা হচ্ছে এবং বর্তমানে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়। বিশেষ
করে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমের চাষ ব্যাপকভাবে হয়।
প্রায় ৪ হাজার বছর আগে থেকে আম চাষ হয়ে আসছে। এখন এটি পৃথিবীর অনেক দেশেই চাষ করা হয়,
যেমন: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো।
আমের গাছ সাধারণত ১০-৪০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এটি
গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। গাছের ফুলগুলো সাধারণত সাদা বা হলুদ রঙের
হয় এবং ফল পাকা হলে হলুদ, লাল বা সবুজ রঙ ধারণ করে।
প্রকারভেদ
ও বৈশিষ্ট্য:
বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ প্রজাতির আম পাওয়া যায়, তার মধ্যে জনপ্রিয়
কয়েকটি হলো:
1. হিমসাগর (ক্ষিরসাপাত)
- উৎপত্তিস্থল: রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
- স্বাদ: অত্যন্ত মিষ্টি, আঁশহীন
- বৈশিষ্ট্য: সুগন্ধযুক্ত, রং হালকা হলুদ, রসালো
2. ল্যাংড়া
- উৎপত্তিস্থল: রাজশাহী ও দিনাজপুর
- স্বাদ: মাঝারি মিষ্টি
- বৈশিষ্ট্য: সবুজ খোসা, আঁশ কম, শক্ত পুষ্ট
3. ফজলি
- উৎপত্তিস্থল: রাজশাহী, নাটোর
- স্বাদ: মিষ্টি ও হালকা টক
- বৈশিষ্ট্য: বড় আকৃতির, রসালো, সংরক্ষণযোগ্য
4. গোপালভোগ
- উৎপত্তিস্থল: রাজশাহী
- স্বাদ: খুব মিষ্টি
- বৈশিষ্ট্য: গন্ধযুক্ত, আঁশ নেই, গড়নে মাঝারি
5. আম্রপালি
- উৎপত্তিস্থল: হাইব্রিড জাত, ভারত থেকে আগত
- স্বাদ: সুস্বাদু
- বৈশিষ্ট্য: ছোট আকার, আঁশবিহীন, বাগানে বেশি
উৎপাদন
6. খিরসাপাত
- উৎপত্তিস্থল: রাজশাহী অঞ্চলে বেশি চাষ
- বৈশিষ্ট্য: দেখতে ও খেতে হিমসাগরের মতো, পাকা
অবস্থায় হলুদ রঙের
7. লক্ষণভোগ
- স্বাদ: হালকা মিষ্টি
- বৈশিষ্ট্য: টকটকে হলুদ রঙ, রসালো।
সংক্ষেপে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভাগ:
- আঁশহীন আম: হিমসাগর,
আম্রপালি
- বড় আকৃতির আম:
ফজলি
- গন্ধযুক্ত আম:
গোপালভোগ
- রসালো আম: ল্যাংড়া,
ফজলি
- হাইব্রিড জাত:
আম্রপালি (উৎপাদন বেশি)
উপকারিতা:
আমের কিছু উপকারিতা হলো:
1. পুষ্টিকর: আমে ভিটামিন A, C, E এবং ফাইবার রয়েছে, যা
শরীরের জন্য উপকারী। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
2. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন C এর কারণে এটি রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
3. হজমে সহায়তা: আমে ফাইবারের পরিমাণ বেশি, যা হজমে সহায়ক।
আয়রন ও ফাইবার – রক্তশূন্যতা ও হজমে সাহায্য করে।
4. ত্বকের জন্য ভালো: আম ত্বককে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর
রাখতে সাহায্য করে। বার্ধক্য রোধ করে।এছাড়া দুধ ও আম একসাথে খেলে শক্তি বাড়ে।
শিশুদের জন্য উপকারী – পুষ্টি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
অপকারিতা:
আমের কিছু অপকারিতা হলো:
1. অ্যালার্জি: কিছু মানুষের আমের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে
পারে, যা খাওয়ার পর অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
2. অতিরিক্ত শর্করা: আমের মধ্যে শর্করার পরিমাণ বেশি, তাই
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
3. পেটের সমস্যা: বেশি খেলে গ্যাস ও বদহজম হতে পারে।
4.রক্তের সমস্যা:অতিরিক্ত পাকা আম খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ
বেড়ে যেতে পারে।
5.কার্বাইড দিয়ে পাকানো: কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতিকর।
চাষাবাদ:
নিচে এর কিছু ধাপ উল্লেখ করা হলো:

1. মাটি নির্বাচন: আমের জন্য দোআঁশ বা বেলে মাটি সবচেয়ে
ভালো। মাটির pH ৬ থেকে ৭ হওয়া উচিত।
2. বীজ বপন: আমের বীজ সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে
বপন করা হয়। বীজগুলো ১-২ সেন্টিমিটার গভীরে বপন করতে হবে।
3. পানি দেওয়া: আমের গাছের জন্য নিয়মিত জল দেওয়া প্রয়োজন,
তবে জলাবদ্ধতা এড়াতে হবে।
4. সার প্রয়োগ: আমের জন্য কম্পোস্ট বা পচা সার ব্যবহার করা
উচিত। এছাড়াও, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
5.রোগবালাই: পাউডারি মিলডিউ, অ্যানথ্রাকনোজ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ
জরুরি।
6. আগাছা দমন: গাছের চারপাশে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে
গাছগুলো পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়।
7. ফসল তোলা: আম সাধারণত ৩-৬ মাসের মধ্যে ফল দেয়। যখন ফলগুলি
রঙিন এবং নরম হয়, তখন তা তোলা হয়।