থানকুনি পাতা"Pennywort"

থানকুনির উৎপত্তি:
থানকুনি পাতা (Centella asiatica) দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, চীন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এবং প্রাকৃতিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরিতে এটি বহু যুগ ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে।
থানকুনি গাছের পরিচয়:
থানকুনি (Centella asiatica) একটি ভেষজ উদ্ভিদ, যা বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও চীনা চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি সাধারনত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জন্মে এবং ছোট, সবুজ, গোলাকৃতি পাতায় পূর্ণ থাকে। থানকুনিকে বাংলায় অনেকে "মানকি গ্রাস" বা "Indian pennywort" নামেও চিনে। এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত পরিচিত এবং পেটের নানা সমস্যা, জ্বর, কাশি ও রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়ক।
থানকুনির উপকারিতা:
- স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্ক উন্নত করে
- লিভার পরিষ্কার রাখে
- ত্বক ও ক্ষত সারাতে সহায়তা করে
- গ্যাস্ট্রিক, আমাশয়, জন্ডিসের জন্য উপকারী
এটি শরবত, ভর্তা, ওষুধ, ক্যাপসুল বা চা হিসেবেও খাওয়া যায়।
থানকুনির পুষ্টি উপাদান:

১০০ গ্রাম থানকুনির পুষ্টি উপাদান (আনুমানিক):
শক্তি: ৪৫–৫০ কিলোক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেট: ৮.৫ গ্রাম
প্রোটিন: ৩.০ গ্রাম
চর্বি: ০.৫ গ্রাম
আঁশ (ফাইবার): ৪.০ গ্রাম
ভিটামিন A: ৬০০–৭০০ IU
ভিটামিন C: ৩৫–৪০ মি.গ্রা.
ভিটামিন B1, B2, B3: অল্প পরিমাণে
ক্যালসিয়াম: ১৭০ মি.গ্রা.
লোহা (Iron): ৫.৬ মি.গ্রা.
ফসফরাস: ৫০–৬০ মি.গ্রা.
পটাশিয়াম: ২০০+ মি.গ্রা.
জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম: অল্প পরিমাণে
থানকুনির ব্যবহার:
১. ঔষধি গুণ: থানকুনি পাতা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিইয়াল গুণে সমৃদ্ধ।
২. হজমে সহায়তা: থানকুনি পাতা হজমের সমস্যা সমাধানে সহায়ক। এটি পেটের গ্যাস এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
৩. ত্বকের যত্ন: থানকুনি পাতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ব্রণ এবং র্যাশের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
৪. সালাদ এবং রান্না: থানকুনি পাতা তাজা সালাদে যোগ করা হয় এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

১. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি:
থানকুনি পাতা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
এটি শরীরের ফ্রির্যাডিক্যালসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
৩. হজমে সহায়তা:
থানকুনি পাতা পেটের গ্যাস, অ্যাসিডিটি এবং অন্যান্য হজমের সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
৪. মানসিক স্বাস্থ্য:
এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায়
দেখা গেছে যে এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।
৫.চর্মরোগের উপশমে:
একজিমা, ফোড়া, খোসপাঁচড়া ইত্যাদিতে উপকারী।
৬. ঘা শুকাতে
সাহায্য করে: ছোট কাটাছেঁড়া বা ক্ষত দ্রুত শুকাতে সহায়তা করে।
৭. জ্বর কমাতে:
জ্বরের সময় পাতার রস ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও থানকুনি পাতা অস্থি
ও সন্ধির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে সন্ধির স্থিতিস্থাপকতা
বজায় রাখে।
থানকুনি পাতা ব্যবহারের পদ্ধতি:
থানকুনি পাতা
ব্যবহার করার জন্য,নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন:
১. তাজা পাতা:
তাজা থানকুনি পাতা সংগ্রহ করুন এবং ভালোভাবে ধুয়ে নিন।পাতা বেটে রস করে সকালে খালি
পেটে পান করা যায়।
২. সালাদে যোগ
করুন: পাতা কেটে তাজা সালাদে যোগ করুন।
৩. পেস্ট তৈরি
করুন: পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগান।
৪.স্কিনকেয়ার
পণ্য: থানকুনি নির্যাসযুক্ত ক্রিম বা লোশন ত্বকে প্রয়োগ করা যায়।
থানকুনির চাষাবাদ:
থানকুনি সাধারণত স্যাঁতসেঁতে ও আর্দ্র পরিবেশে ভালো জন্মে। নদীর পাড়, জলাভূমি, পুকুরপাড়, ছায়াযুক্ত জমি ও আর্দ্র ক্ষেত হলো এর উপযোগী স্থান। এটি বীজ ও মূলের মাধ্যমে সহজে ছড়িয়ে পড়ে।
থানকুনি চাষের ধাপ:
১. জমি নির্বাচন: আর্দ্র, ছায়াযুক্ত, সুনিষ্কাশিত জমি। মাটির pH স্তর ৬-৭ এর
মধ্যে হওয়া উচিত।
২. প্রস্তুতি: আগাছামুক্ত করে জৈব সার মিশিয়ে নরম মাটি
তৈরি।এটি সাধারণত ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।
৩. রোপণ: শাখা বা মূলসহ ছোট কাণ্ড ২০-২৫ সেমি দূরত্বে রোপণ।
৪. সেচ: মাটি সবসময় ভেজা রাখতে হবে, তবে জলাবদ্ধতা
যেন না হয়।
৫. রোগবালাই: পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম, মাঝে মাঝে
ছত্রাকজনিত সমস্যা হতে পারে।
৬.ফলন:থানকুনি পাতা সাধারণত ২-৩ মাসের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।
সাধারণত একবার রোপণের পর নিয়মিত পরিচর্যায় বছরজুড়ে এই পাতার
সরবরাহ পাওয়া যায়। এটি একটি লাভজনক ও ঔষধি হিসেবেও জনপ্রিয়।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে।
দীর্ঘদিন নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
ভালো।
কিছু মানুষের থানকুনি পাতার প্রতি অ্যালার্জি থাকতে
পারে, তাই প্রথমবার ব্যবহার করার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
মন্তব্যসমূহ