স্ট্রবেরি(Strawberry)

 স্ট্রবেরি(Strawberry)



স্ট্রবেরি, যা ইংরেজিতে "Strawberry" নামে পরিচিত, একটি জনপ্রিয় ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম "Fragaria × ananassa"। স্ট্রবেরি সাধারণত তাজা খাওয়া হয় এবং এটি বিভিন্ন ডেজার্ট, সালাদ এবং জুসে ব্যবহৃত হয়। স্ট্রবেরি (Strawberry) একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল যা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। স্ট্রবেরির আদি উৎপত্তি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপে। প্রাচীনকাল থেকে এটি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পরিচিত ছিল। ১৮শ শতকের দিকে, ইউরোপে স্ট্রবেরির বিভিন্ন প্রজাতি সংকরিত হয়ে আধুনিক স্ট্রবেরির উৎপত্তি ঘটে। আধুনিক স্ট্রবেরির উৎপত্তি হয়েছে ১৮শ শতকে ফ্রান্সে দুটি জাত (Fragaria virginiana ও Fragaria chiloensis) সংকর করে।

 বর্তমানে স্ট্রবেরি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চাষ করা হয়।

প্রকারভেদ:

স্ট্রবেরির অনেক জাত রয়েছে, এর মধ্যে জনপ্রিয় কিছু:

১. Sweet Charlie যা বাংলাদেশে বেশি চাষ হয়

২. Festival

৩. Camino Real


৪. Winter Dawn

৫. Albion – যা উচ্চ ফলনশীল

পুষ্টি উপাদান

১০০ গ্রাম স্ট্রবেরিতে থাকা প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো নিচে দেওয়া হলো:

১. শক্তি (Energy): প্রায় ৩২ কিলোক্যালোরি 

২. পানি: প্রায় ৯১% 

৩. কার্বোহাইড্রেট: ৭.৭ গ্রাম 

   এর মধ্যে চিনি: ৪.৯ গ্রাম 

   ফাইবার: ২ গ্রাম 

৪. প্রোটিন: ০.৭ গ্রাম 

৫. ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম  

ভিটামিন ও খনিজ:

ভিটামিন C: ৫৮.৮ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার প্রায় ৯৮%) 

ফোলেট (B9): ২৪ মাইক্রোগ্রাম 

পটাশিয়াম: ১৫৩ মিলিগ্রাম 

ক্যালসিয়াম: ১৬ মিলিগ্রাম 

 আয়রন: ০.৪১ মিলিগ্রাম 

ম্যাগনেসিয়াম: ১৩ মিলিগ্রাম 

স্ট্রবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিন ও এলাজিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

উপকারিতা

১. স্ট্রবেরিতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

২. এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে, যা শরীরের ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

৩. স্ট্রবেরি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৪. এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি, যা হজমে সহায়ক।

৫. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী।

৬. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

৭. ক্যালোরি কম, ডায়েটিংয়ের জন্য উপযুক্ত।

ক্ষতিকর দিক

১. কিছু মানুষের স্ট্রবেরির প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা খাওয়ার পর অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

২. যদি স্ট্রবেরি সঠিকভাবে ধোয়া না হয়, তবে এতে ক্ষতিকর পেস্টিসাইড থাকতে পারে।

৩. অতিরিক্ত স্ট্রবেরি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে, যেমন ডায়রিয়া।

৪. অতিরিক্ত খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।

৫. কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো বা সংরক্ষিত স্ট্রবেরি ক্ষতিকর হতে পারে।

চাষাবাদ

স্ট্রবেরির চাষাবাদ একটি সহজ প্রক্রিয়া। নিচে এর কিছু ধাপ উল্লেখ করা হলো:

১. মাটি নির্বাচন: স্ট্রবেরির জন্য দোআঁশ বা বেলে মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটির pH ৫.৫ থেকে ৬.৫ হওয়া উচিত।

২. বীজ বপন: স্ট্রবেরির বীজ সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বপন করা হয়। বীজগুলো ১-২ সেন্টিমিটার গভীরে এবং ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বপন করতে হবে।

৩. পানি দেওয়া: স্ট্রবেরির জন্য নিয়মিত পানি দেওয়া প্রয়োজন, তবে জলাবদ্ধতা এড়াতে হবে।

৪. সার প্রয়োগ: স্ট্রবেরির জন্য কম্পোস্ট বা পচা সার ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৫. আগাছা: স্ট্রবেরির চারপাশে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে গাছগুলো পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়।

৬. ফসল তোলা: স্ট্রবেরি সাধারণত ৪-৬ মাসের মধ্যে ফল দেয়। যখন ফলগুলি রঙিন এবং নরম হয় তখন তা তোলা হয়।

Next Post Previous Post

SVG Icons