পেঁপে(Papaya)

 পেঁপে(Papaya)

পরিচয়


পেঁপে
, যার বৈজ্ঞানিক নাম "Carica papaya", একপ্রকার গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর ফল সবজি যা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে জন্মে এবং বাংলাদেশের সর্বত্র সহজলভ্য এটি Caricaceae গোত্রের অন্তর্গত একটি গাছ গাছটি সাধারণত -২০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে, কাণ্ড নরম রসালো এবং পেঁপে গাছের পাতা বড়, খাঁজকাটা এবং গাছের শীর্ষে অবস্থিত পেঁপে গাছ একলিঙ্গ বা উভলিঙ্গ বিশিষ্ট হয় এবং সাধারণত সারা বছরই ফল দেয় এটি ফল হিসেবেও খাওয়া হয় আবার সবজি হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এর ইউনানী নাম পাপিতা, আরানড খরবূযা। এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বীচট্টগ্রাম অঞ্চলে এটি "হঁইয়া" এবং ফেনী অঞ্চলে এটি "কইয়া" নামে পরিচিত

উৎপত্তি বিকাশ

পেঁপের আদি নিবাস আমেরিকার মধ্য দক্ষিণ অঞ্চলবিশেষ করে মেক্সিকো কোস্টারিকার অঞ্চল এটি পরে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে পেঁপে গাছের বিকাশের জন্য উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন এবং এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় পেঁপে গাছের চাষের জন্য সাধারণত -১২ মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায় বাংলাদেশে এটি অনেক আগে থেকেই ঘরোয়া বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে আসছে

ব্যবহার

পেঁপের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর বহুমুখী ব্যবহার পাকা পেঁপে মিষ্টি, রসালো সুস্বাদু এটি কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়,যা বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রচলিতপেঁপে দিয়ে মাছ, মাংস রান্না করলে সহজে সেদ্ধ হয় কাঁচা পেঁপে দিয়ে তৈরি "পেঁপে ভাজি" বা "পেঁপে চচ্চড়ি" অনেকের প্রিয় খাবার এছাড়া, পাকা পেঁপে জ্যাম, জেলি, জুস, আচার, আইসক্রিম ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পেঁপের পাতাও কিছু ক্ষেত্রে ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পেঁপে গাছের চাষের মাধ্যমে কৃষকরা ভালো আয় করতে পারেন, কারণ পেঁপে ফলের বাজারে চাহিদা রয়েছে পেঁপে ফল তাজা অবস্থায় বিক্রি করা হয় এবং এটি বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং বাজারে পাওয়া যায় পেঁপে গাছের ফলন সাধারণত -১২ মাসের মধ্যে পাওয়া যায়, যা কৃষকদের জন্য একটি দ্রুত আয়ের উৎস স্থানীয় বাজার ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে এটি বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

চাষাবাদ

পেঁপে দো-আঁশ বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়মাটির পিএইচ . থেকে . এর মধ্যে হওয়া উচিত উঁচু জলাবদ্ধতামুক্ত জায়গা পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী পেঁপে গাছের চাষের জন্য উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন এবং এটি সূর্যের আলো পছন্দ করেমার্চ-এপ্রিল অথবা জুলাই-আগস্ট মাসে পেঁপের চারা রোপণ করা উত্তম রোপণের - মাস পর ফল আসতে শুরু করে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, সেচ পচা সার এবং নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করা উচিতবর্তমানে হাইব্রিড জাতের মধ্যেরেড লেডি দেশি জাতের মধ্যেসুন্দরবনী’, ‘গাজীপুর-প্রভৃতি জনপ্রিয়

উপকারিতা


পেঁপেতে
প্রচুর ভিটামিন , বি, সি, , ক্যালসিয়াম, আয়রন আঁশ থাকে পেঁপে ফলের মধ্যে প্যাপেইন নামক একটি এনজাইম রয়েছে, যা প্রোটিন হজমে সহায়ক কাঁচা পেঁপেতে থাকা প্যাপেইন নামক এনজাইম হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে কাঁচা পেঁপে রক্ত পরিষ্কার করে এবং লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে

১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে যা থাকে তা নিম্নরূপ:

উপাদান

খাদ্যশক্তি

খনিজ পদার্থ

শর্করা

স্নেহ

আমিষ

ফাইবার

ভিটামিন সি

আয়রন

পটাসিয়াম

সোডিয়াম

পরিমাণ

৩২ কিলোক্যালরি

 

.৫ গ্রাম

.২ গ্রাম

.১ গ্রাম

.৬ গ্রাম

.৮ গ্রাম

৫৭ মিলিগ্রাম

 

.৫ মিলিগ্রাম

৬৯ মিলিগ্রাম

৬ মিলিগ্রাম

 

অপকারিতা

পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতা থাকতে পারে গর্ভবতী নারীদের কাঁচা পেঁপে না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে থাকা ল্যাটেক্স/ প্যাপেইন উপাদান গর্ভপাত ঘটাতে পারে এছাড়া যাদের ল্যাটেক্স বা প্যাপেইনে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের জন্য পেঁপে ক্ষতিকর হতে পারে অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁপে খেলে ডায়রিয়া পেট ব্যথা হতে পারে

ঔষধি গুণাগুণ


পেঁপে
শুধু একটি সুস্বাদু ফল নয়, বরং এটি বিভিন্ন ঔষধি গুণও ধারণ করে পেঁপে পাতা এবং বীজেরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে পেঁপে পাতা রক্তের প্লেটলেট বাড়াতে সাহায্য করে এবং এটি ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় পেঁপে বীজে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেপেঁপে ফলের রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারী এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে পেঁপে পেস্ট ত্বকে লাগালে এটি মৃত কোষ দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ করতে সাহায্য করে

উপসংহার

পেঁপে একটি পুষ্টিকর, ঔষধিগুণ সম্পন্ন অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফল এটি আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখে পেঁপের চাষ বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা সম্ভব সঠিকভাবে ব্যবহারে এটি হতে পারে আমাদের সুস্বাস্থ্যের সহায়ক কৃষকের আয়ের উৎস তবে, কিছু অপকারিতা এবং সতর্কতা মেনে চলা উচিতপেঁপে আমাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং এর পুষ্টিগুণের সুবিধা গ্রহণ করা উচিত

Next Post Previous Post

SVG Icons