টমেটো(Tomato)
টমেটো(Tomato)

টমেটো একটি অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় সবজি ও ফল। এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায়
ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রান্না, সালাদ, চাটনি, কেচাপসহ বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে এর ব্যবহার রয়েছে। টমেটো
কেবল স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও
অনন্য।
টমেটোর
পরিচয়:
বৈজ্ঞানিকভাবে
Solanum
lycopersicum নামে পরিচিত, এটি একটি বহুল পরিচিত সবজি যা
বৈজ্ঞানিকভাবে ফল হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি Solanaceae পরিবারভুক্ত একটি উদ্ভিদ।
যদিও এটি ফল, কিন্তু ব্যবহার ও স্বাদের কারণে
অধিকাংশ মানুষ এটিকে সবজি হিসেবেই জানে।টমেটো সাধারণত তার রসালো, মাংসল ফলগুলির জন্য চাষ করা হয়,
যা বিভিন্ন রঙ, আকার এবং স্বাদে পাওয়া
যায়। এটি কাঁচা এবং রান্না উভয়ভাবেই খাওয়া যায় এবং
এটি বিভিন্ন রান্নার একটি অপরিহার্য উপাদান।
টমেটোর
উৎপত্তি ও ইতিহাস:
টমেটোর উৎপত্তি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়। পরবর্তীতে এটি
ইউরোপ এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। । এটি মেক্সিকোর স্থানীয়দের দ্বারা প্রথম চাষ করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। মেক্সিকান
নাহুয়াতল শব্দ "টমোটল" থেকে টমেটো শব্দটি এসেছে, যা পরে স্প্যানিশ ভাষায়"টমাটে" এবং সেখান থেকে ইংরেজি ভাষায়"টমেটো"
তে রূপান্তরিত হয়েছে।
ইউরোপে
টমেটোর আগমন ঘটেছিল পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, যখন কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার
করেন। প্রথমে একে বিষাক্ত বলে মনে করা হতো কিন্তু
ধীরে ধীরে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ মানুষের কাছে পরিচিত হতে থাকে এবং বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী
এক জনপ্রিয় সবজি।
টমেটোর বৈশিষ্ট্য:
টমেটোর গাছ সাধারণত লতানো প্রকৃতির হয়ে থাকে, তবে কিছু
প্রজাতি ঝোপের মতোও হয়ে থাকে। এর পাতাগুলি অন্যান্য
সোলানেসি পরিবারের সদস্যদের থেকে কিছুটা আলাদা এবং এতে কিছু বিশেষ অ্যালকালয়েডও
অনুপস্থিত থাকে।।টমেটোর ফলগুলি
সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে, তবে কিছু প্রজাতি লম্বাটে বা নাশপাতি
আকারেরও হয়ে থাকে। ফলগুলি সাধারণত লাল রঙের হলেও
হলুদ, কমলা, সবুজ এবং বেগুনি
রঙের টমেটোও পাওয়া যায়। প্রতিটি ফলে সাধারণত দুটি বা
তার বেশি বীজকোষ থাকে, যা জেলির মতো পদার্থ দিয়ে ঘেরা
থাকে।
টমেটোর প্রকারভেদ:

টমেটোর বিভিন্ন জাত রয়েছে, যেমন:
1. চ্যারি টমেটো
2. বিফস্টেক টমেটো
3. রোমা টমেটো
4. হাইব্রিড জাত
উপকারিতা:
1. স্বাস্থ্যগত উপকার:টমেটোতে প্রচুর ভিটামিন C, A, K ও পটাশিয়াম থাকে- এতে থাকা লাইকোপেন একটি শক্তিশালী
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।ত্বক উজ্জ্বল ও দাগহীন রাখতে সহায়তা
করে।চোখের জন্য উপকারী ।হজমে সাহায্য করে।
2. দৈনন্দিন খাদ্য উপাদান: রান্নায়টমেটো ব্যবহার খাবারের স্বাদ বাড়ায়।।সালাদ ও জুস হিসেবে ব্যবহার হয়।কেচাপ, সস, চাটনিতে ব্যবহৃত হয়।
3. ওজন কমাতে সহায়ক:কম ক্যালোরি ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ওজন কমাতে সহায়তা
করে।
অপকারিতা:
অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।কাঁচা অবস্থায়বেশি খাওয়া গেলে
পেটের সমস্যা।অ্যালার্জি
সমস্যা হতে পারে।
ব্যবহার:
টমেটো বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। এটি সালাদ, স্যান্ডউইচ, সস, জুস
এবং স্যুপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। টমেটো থেকে টমেটো সস, পেস্ট, এবং আচারও তৈরি করা হয়। এটি রান্নার স্বাদ বাড়াতে এবং বিভিন্ন খাবারে একটি আকর্ষণীয় উপাদান
হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
টমেটোর চাষাবাদ:

১. জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি:টমেটো
চাষের জন্য উঁচু ও জলনিষ্কাশনযোগ্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।
জমি চাষ করে মিহি করে নিতে হবে এবং
আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করতে হয়।
২. বীজ বপন ও চারা প্রস্তুতি:প্রথমে
নার্সারিতে বীজ বপন করতে হয়।বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত হয়।
৩. চারা রোপণ:সারি ও গাছের
মধ্যে ৫০ সেমি দূরত্ব রাখা উচিত।রোপণের সময় সন্ধ্যায় হালকা সেচ দেওয়া ভালো।
৪. সার ব্যবস্থাপনা:গোবর:
প্রতি শতকে ১০-১৫ কেজি।ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি সঠিক হারে প্রয়োগ
করতে হয়।অর্ধেক ইউরিয়া ও অন্যান্য সার মাটিতে রোপণের সময়, বাকি ইউরিয়া কুশি আসার সময় দিতে হয়।
৫. সেচ ও নিড়ানি:৮-১০ দিন
পরপর সেচ দিতে হয়।আগাছা পরিষ্কার করতে মাঝে মাঝে নিড়ানি দিতে হবে।
৬. রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ:পাতা
মোড়ানো পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা, ঝলসানো রোগ প্রভৃতি প্রতিরোধে উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে
হয়।
৭. ফল সংগ্রহ:ফুল আসার
৫৫-৭০ দিন পর টমেটো পাকা শুরু করে।হালকা লাল হওয়া মাত্র সংগ্রহ করা ভালো, যাতে বাজারজাতকরণে সুবিধা হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
টমেটো একটি লাভজনক সবজি বা ফল।এটি বাজারে চাহিদাসম্পন্ন এবং কৃষকেরা এটি চাষ করে ভালো লাভ করতে পারে।
প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতেও টমেটোর চাহিদা প্রচুর।
পরিশেষ:
টমেটো একটি পুষ্টিকর, উপকারী ও বহুবিধ ব্যবহৃত সবজি। এর চাষ সহজ এবং লাভজনক।
স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় টমেটো থাকা অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়।তবে পরিমিত ও সঠিকভাবে খাওয়াই উত্তম।