আমড়া( Hog Plum/Ambarella)

                                         আমড়া( Hog Plum/Ambarella)

আমড়ার ইংরেজি নাম হলো Hog Plum বা Ambarellaআমড়া (Spondias dulcis) বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি সাধারণত বর্ষাকালে পাওয়া যায় এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত এর চাহিদা রয়েছে। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়, আবার আচার, জ্যাম, জেলি ও রস তৈরি করেও খাওয়া হয়। আমড়া খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর পুষ্টিগুণ ও ওষধি গুণও অনেক।

উৎপত্তি ও পরিচিতি:

আমড়ার উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, তবে এখন এটি দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ও আফ্রিকার কিছু অংশে বিস্তৃত। বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনে এটি বেশ জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে আমড়ার চাষ হলেও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে এর চাষ বেশি হয়।

গাছের বিবরণ:

আমড়া গাছ মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে এবং সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতাগুলো যৌগিক ও পালক আকৃতির হয়। গ্রীষ্মকালে গাছে ছোট সাদা বা হালকা সবুজ রঙের ফুল ফোটে এবং বর্ষাকালে ফল আসে। ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকা অবস্থায় হালকা হলুদাভ রঙ ধারণ করে। এর ভেতরে একটি শক্ত আঁটি থাকে।

পুষ্টিগুণ:

আমড়া ভিটামিন C-এর চমৎকার উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় রয়েছে:

উপাদান

পরিমাণ

শর্করা

১৫ গ্রাম

খাদ্য শক্তি

৬৬ কিলোক্যালরি

চর্বি

০.১ গ্রাম

ক্যালসিয়াম

৫৫ মিলিগ্রাম

ভিটামিন সি

৯২ মিলিগ্রাম

ক্যারোটিন

৮০০ মাইক্রোগ্রাম

আয়রন

৩.৯ মিলিগ্রাম

প্রোটিন

১.১ গ্রাম

ভিটামিন বি

১০.২৮ মিলিগ্রাম

অন্যান্য খনিজ পদার্থ

০.৬ মিলিগ্রাম


উপকারিতা:
১.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: আমড়া ভিটামিন C-তে ভরপুর হওয়ায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. হজমে সহায়ক: এতে থাকা আঁশ পাচন ক্রিয়া সহজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
৩. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন A ত্বকের বলিরেখা হ্রাস করে, চুলের গঠন ভালো রাখে।
৪. রক্তশূন্যতা রোধ: এতে আয়রন থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগী।
৬.দাঁত ও মাড়ির যত্নে: কাঁচা আমড়া চিবালে দাঁত ও মাড়ি মজবুত হয়, রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
অপকারিতা:
অতিরিক্ত কাঁচা আমড়া খেলে এসিডিটি, গ্যাস বা পেটের সমস্যা হতে পারে।অতিরিক্ত টকজাতীয় খাবার দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে।সংবেদনশীল ব্যক্তিদের এলার্জি হতে পারে।এছাড়া পাকা আমড়ায় অতিরিক্ত চিনি যুক্ত করলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
আমড়া শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, এটি থেকে তৈরি হয় নানা ধরনের খাবার যেমনআচার, জেলি, জ্যাম ইত্যাদি। ফলে আমড়া প্রক্রিয়াজাত করেও বাজারজাত করা যায়। এটি একটি লাভজনক ফল হওয়ায় অনেক কৃষক আমড়া চাষে আগ্রহী। স্থানীয় বাজার ছাড়াও বিদেশে আমড়ার চাহিদা রয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখে।
চাষাবাদ:
আমড়া গাছ প্রধানত কাটিং বা বীজ পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল এর জন্য উপযুক্ত সময়। উঁচু ও জলাবদ্ধতামুক্ত ভূমিতে আমড়া ভালো জন্মায়। সার হিসেবে গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। একবার চারা রোপণ করলে ৩-৪ বছরের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে এবং প্রতি গাছ বছরে প্রায় ৫০-১০০ কেজি ফল দেয়।
পরিশেষ:
 আমড়া একটি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর দেশি ফল। স্বাদ, পুষ্টি, ওষধি গুণাগুণ ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় এটি আমাদের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। নিয়মিত আমড়া খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে সুস্থ জীবনের অংশ হিসেবে।

 

 

Previous Post

SVG Icons